মাসিকের সময় খাবার
রিমার যখন প্রথম পিরিয়ড হয়, তখন তার দাদি তাকে বলেছিলেন ঋতুস্রাবের দিনে মাছ না খাওয়ার জন্য। এরফলে পার প্রজনন অংগে দুর্গন্ধ হতে পারে। রিমার মা দৃঢ়ভাবে বলেছিলেন যে, মাছ হতে এধরনের কোন সমস্যা হয় না এবং তার মেয়েকে এই ধরনের কুসংস্কার না বলার জন্য।
আমরা সবাই কমবেশি এই ধরনের উপদেশ শুনেছি - "মাসিকের সময় এটি খাওয়া যাবে না বা এই খাবার প্রচুর পরিমাণে খেতে হবে"। এইসব তথ্যের বেশিরভাগই সতত্যার ভিত্তি নেই।
আপনি কি জানেন যে আপনার মাসিকের সময় মাছ খাওয়া আসলেই উপকারী?
এই দিনগুলিতে আপনাকে সাহায্য করবে এমন কিছু খাবার আসলেই রয়েছে। পিরিয়ড মানে শুধু রক্তপাত নয়। এটি ক্র্যাম্প, মেজাজ পরিবর্তন, বদ হজম, বমি বমি ভাব এবং ফোলাভাব এর মত কিছু সমস্যাও নিয়ে আসে। সুতরাং, আপনার মাসিকের সময় একটি ভাল খাদ্য বজায় রাখলে, এই সমস্যাগুলি কমাতে কিছুটা উপকৃত হতে পারেন।
তরল খাদ্য
প্রথমত, আপনার শরীরের এসময়ে প্রচুর পরিমাণে তরলের প্রয়োজন। হাইড্রেটেড থাকা সর্বদা প্রয়োজনীয়, তবে আপনি যখন ইতিমধ্যে রক্ত নিঃসরণ করছেন, তখন হাইড্রেটেড থাকা আগের চেয়ে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ডিহাইড্রেশনের কারণে হাত ও পায়ে ফোলাভাব, মাথাব্যথা হতে পারে।
একইভাবে, আপনার এমন ফল এবং শাকসবজি খেতে হবে যেটিতে পানির পরিমান বেশি থাকে। ফল এবং সবজি, যেমন শসা, তরমুজ, কমলা, আনারস, সেলারি, জাম্বুরা, পীচ, লেবু, সাইট্রাস এবং আরও অনেক কিছু খুবই উপকারী। তারা ক্র্যাম্প কমাতে সাহায্য করে।
ফাইবারযুক্ত খাবার
তাছাড়া, আপনাকে উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার খেতে হবে। যেমন ফুলকপি, ব্রকলি, বকচয়, চিয়া বীজ, ফ্ল্যাক্সসিড, স্ট্রবেরি, আপেল ইত্যাদি। এগুলো পিএমএস সমস্যা যেমন ক্র্যাম্প কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও, পিরিয়ড চলাকালীন আমরা যে হজম সমস্যাগুলির মুখোমুখি হই, সেগুলির জন্যও এগুলি নিখুঁত সমাধান।
উচ্চ আয়রন যুক্ত খাদ্য
পানি ছাড়া, পিরিয়ডের সময় আপনার আয়রনেরও পরিমাণ কম থাকবে। কম আয়রন স্তর মানে মাথা ঘোরা, ক্লান্তি এবং বমি বমি ভাব হওয়া। এটি মোকাবেলা করার জন্য, আপনার খাদ্যতালিকায় আপনাকে শাক, লেটুস, কেল, সুইস চার্ড, ব্রোকলি এবং আরও অনেক কিছু যোগ করতে হবে। বাংলাদেশে শাক-সবজির জন্য ভালো বিকল্প হল পালং শাক (মালাবার পালং শাক) এবং লাল শাক।
প্রোটিন
মাসিকের সময়, লাল মাংস থেকে দূরে থাকা ভালো। এটি উচ্চ স্তরের প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন বাড়ায়, যারফলে বেদনাদায়ক ক্র্যাম্পস সৃষ্টি হয়। লাল মাংসের পরিবর্তে, মুরগির মতো চর্বিহীন মাংসে স্যুইচ করুন এতে আয়রন এবং প্রোটিন বেশি মাত্রায় থাকছে।
মাছ হল সেরা প্রোটিন বিকল্পগুলির মধ্যে একটি, কারণ এতে উচ্চ স্তরের ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, যা ক্র্যাম্পের ব্যথা কমায় এবং মেজাজের পরিবর্তন এবং খিটখিটে ভাবের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে।
আপনি যদি নিরামিষভোজী হন বা নিরামিষাশী হন, সেক্ষেত্রে ভালো প্রোটিনের বিকল্প হল মসুর, মটরশুটি এবং বাদাম। এগুলি প্রোটিন, আয়রন এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ।
অন্যান্য
আপনার খাবারের তালিকায় আরো কিছু জিনিস অন্তর্ভুক্ত করা উচিত, যেমন আদা, হলুদ এবং পিপারমিন্ট। এগুলি চা আকারে নেওয়া ভালো। এগুলো ফ্লো এবং পেশীর ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
লবণ, চিনি, ক্যাফেইন, অ্যালকোহল এবং নিকোটিন গ্রহণ কমিয়ে দিতে পারেন। এগুলি পেশীতে ব্যথা, ক্র্যাম্প, মেজাজের পরিবর্তন, ফোলাভাব এবং ডিহাইড্রেশন বাড়ায়।
খাবারের তালিকায় কিছুটা নিয়ন্ত্রন করার, এর অর্থ কিন্ত এই নয় যে আপনাকে সমস্ত মজাদার খাবার ছেড়ে দিতে হবে। ডার্ক চকলেট, টোফু, দই, কিমচি এবং পিনাট বাটার সবই আপনার জন্য উপকারী! এগুলো ব্যথা নিয়ন্ত্রন করতে এবং ভালো হজম করতে সাহায্য করে।
Download Chondo App
Track your period and get notified.
Download
Beta