স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে আপনার সচেতনতাই প্রধান হাতিয়ার
স্তন শরীরের অন্যান্য অংশের মতোই একটি অঙ্গ, যা অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কোষের সমন্বয় এ তৈরী। শরীরের অন্যান্য অঙ্গের মতোই এই কোষ গুলো পূর্ব নির্ধারিত একটি সুনির্দিষ্ট নিয়মে বিভাজিত হয়। অনেক সময়ে বিভিন্ন কারণে কোষগুলো তাদের এই বিভাজনের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে এবং এই অনিয়ন্ত্রিত বিভাজনের ফলে স্তনে একটি চাকা বা পিন্ড সৃষ্টি হয়, যা টিউমার নামে পরিচিত। এই টিউমার দুই ধরণের হয়, বিনাইন বা 'ক্ষতিকারক নয়' এবং ম্যালিগ্ন্যান্ট যা সাধারণ ভাবে ক্যান্সার নামে পরিচিত। স্তনের ক্যান্সার সাধারণত স্তনের নালীর ভিতর থেকে শুরু হয়ে স্তনের মেদযুক্ত অংশে ছড়িয়ে পড়ে। প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নির্ণয় করা না গেলে এই ক্যান্সার আশেপাশের গ্রন্থি এমনকি রক্ত প্রবাহের মাধ্যমে দূরের অঙ্গেও ছড়িয়ে পরতে পারে।
স্তন ক্যান্সার ও বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটঃ
বাংলাদেশে মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যান্সার প্রধানতম ক্যান্সার সমস্যা। ইন্ট্যারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার এর সূত্রমতে প্রতিবছর বাংলাদেশে স্তন ক্যান্সারে নতুন করে ১৪ হাজার ৮২২ জন আক্রান্ত হন এবং ৭ হাজার ১৩৫ জন মারা যান। যা নারী ক্যান্সার রোগীদের মধ্যে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার যথাক্রমে ২৩.9% ও ১৬.৯%।
স্তন ক্যান্সারের কারণ বা ঝুঁকি সমূহঃ
- স্তন ক্যান্সারের পারিবারিক ইতিহাস থাকলে।
- বয়স ৪০ এর ঊর্ধে হলে।
- কম বয়সে মাসিক ঋতুস্রাব শুরু হলে বা দেরীতে বন্ধ হলে।
- বেশী বয়সে প্রথম সন্তান ধারণ বা নিঃসন্তান থাকা।
- সন্তানকে বুকের দুধ না পান করানো।
- দীর্ঘদিন গর্ভ নিরোধক বড়ি ব্যাবহার করলে।
- অধিক চর্বিযুক্ত খাদ্যভাস বা স্থূলতা।
- ধূমপান, মদ্যপান বা তামাক জাতীয় দ্রব্যে আসক্তি।
স্তন ক্যান্সারের লক্ষণ কি কি?
- স্তনের গঠন, আকার-আকৃতিতে যেকোন ধরণের পরিবর্তন হওয়া
- স্তনে কোন চাকা বা গোটা পরিলক্ষিত হওয়া।
- স্তনে অত্যাধিক তাপ,চাপ বা ব্যাথা অনুভূত হওয়া।
- স্তনের চামড়া কুঁচকে যাওয়া বা স্তনের বোঁটা ভিতর দিকে দেবে যাওয়া।
- স্তনের বোঁটা থেকে পুঁজ বা রক্তযুক্ত নিঃসরণ হলে।
- Feeling of a cyst or lump in the armpit.
স্তন ক্যান্সারের প্রাথমিক প্রতিরোধঃ
- বিয়ে বা প্রথম সন্তান ধারণ ৩০ বছরের আগেই সম্পন্ন করতে হবে।
- শিশুকে নিয়মমতো বুকের দুধ পান করাতে হবে।
- স্বাস্থ্যকর, সুষম খ্যাদ্যাভাস ও নিয়মিত শরীর চর্চার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
- ধূমপান, পান-জর্দা, বা অন্যান্য তামাক জাতীয় দ্রব্য সম্পূর্ণভাবে পরিহার করতে হবে।
- নিজেই নিজের স্তন পরীক্ষার অভ্যাস করতে হবে।
স্তন ক্যান্সার স্ক্রিনিং কি এবং কখন করবেন?????
স্তন ক্যান্সারের কোন লক্ষণ বা উপসর্গ নেই এমন ব্যক্তির মধ্যে থেকে খুব সহজ পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ে স্তন ক্যান্সার নির্ণয়ের পদ্ধতিকেই ক্যান্সার স্ক্রিনিং বলে। এই স্ক্রিনিং বয়স ও অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ কারণের উপর নির্ভর করে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। এই স্ক্রিনিং এর জন্য তিন ধরনের পদ্ধতি রয়েছে, তা হলো-
১) নিজেই নিজের স্তন পরীক্ষা করাঃ
প্রতি মাসে একবার এই পরীক্ষা করতে হবে। ২০ বছর বয়স থেকে শুরু করে একজন মহিলা সারা জীবন নিজেই এই পরীক্ষা করতে পারেন। মাসিক ঋতুস্রাব শেষ এর ১ সপ্তাহের মধ্যে এই পরীক্ষা করলে ভালো হয়। যাদের নিয়মিত মাসিক বন্ধ হয়ে গেছে বা কোন কারণে অনিয়মিত হয়, তারা প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট তারিখে এই পরীক্ষা করতে পারেন।
২) চিকিৎসক দিয়ে স্তন পরীক্ষাঃ
৩০-৪০ বছর বয়স সীমার মাঝে যারা আছেন,তারা প্রতি ৩ বছর পর পর ১ বার এবং ৪০ ঊর্ধো বয়সী নারীরা প্রতি বছর ১ বার চিকিৎসকের কাছে গিয়ে এই পরীক্ষা করাবেন। এছাড়াও যদি কেউ স্তনে অস্বাভাবিক কোন পরিবর্তন লক্ষ করেন তাহলেও সাথে সাথেই চিকিতসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
৩) ম্যামোগ্রামঃ
এটি স্তনের একটি বিশেষ ধরণের এক্স-রে, যার মাধ্যমে স্তনে খুব ছোট কোন চাকা বা অস্বাভাবিক পরিবর্তন ধরা পড়ে।তবে এই পরীক্ষাটি ৪০ বছরের কম বয়সীদের জন্য প্রযোজ্য নয়। ৪৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সী মহিলারা প্রতি বছর ১ বার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এই পরীক্ষা করাতে পারেন।
মনে রাখবেন প্রাথমিক পর্যায়ে স্তন ক্যান্সার নির্ণয় করা গেলে তা সম্পূর্ণ নিরাময়ের সম্ভবনা অনেকগুণ বেড়ে যায়।
স্তন ক্যান্সার নির্নয়ের পদ্ধতি সমূহঃ
সেলফ ব্রেস্ট এক্সামিনেশন, ক্লিনিকাল ব্রেস্ট এক্সামিনেশন বা ম্যামোগ্রাফী তে সন্দেহজনক কিছু ধরা পড়লে চিকিৎসক আরো নিশ্চিত হবার জন্য বিভিন্ন ধরণের টেস্ট দিতে পারেন। এর মধ্যে এফ এন এ সি, বায়োপসি, কোর নিডোল বায়োপসি এবং ইমুয়নো হিস্টোকেমিস্ট্রি উল্লেখযোগ্য। আর এতে যদি স্তন ক্যান্সার ধরা পড়ে তবে চিকিৎসক রোগীর প্রয়োজনে ক্যান্সার স্টেজিং নির্ধারণের জন্য নানা পরীক্ষা দিতে পারেন।
স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসাঃ
স্তন ক্যান্সারে সাধারণত সার্জারী, কেমোথেরাপী, রেডিওথেরাপী, হরমোন থেরাপী, টার্গেটেড থেরাপী ইত্যাদি চিকিৎসা দেয়া হয়ে থাকে। তবে কোন রোগীর ক্ষেত্রে কোন সময়ে কোন চিকিৎসা প্রয়োজন,একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারই কেবল সেই পরামর্শ দিতে পারেন।
লেখকঃ
ডাঃ মোহাম্মদ মাসুমুল হক
এম বি বি এস, এম পি এইচ
প্রতিষ্ঠাতা, ক্যান্সার এওয়ারনেস ফাউন্ডেশন অফ বাংলাদেশ
Download Chondo App
Track your period and get notified.
Download
Beta